আইনস্টাইন যদি বোরিং বিজ্ঞানী না হয়ে রম্যলেখক হতেন তখন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব গুলো হত কিছুটা এমন :-
আমি যদি ফেসবুকে ৫ ঘণ্টা ধরে অনলাইন থাকি, তবে আমার মনে হবে যেন আমি মাত্র ৫ মিনিট ধরে অনলাইনে আছি। কিন্তু যদি পাঠ্যপুস্তকের সামনে আমি ৫ মিনিটও বসে থাকি, তাহলে আমার মনে হবে যেন আমি অনন্তকাল ধরে বসে আছি!
অর্থাৎ সময় পরম নয় সময় আপেক্ষিক।
ধরা যাক, একজন পরীক্ষার্থী তার অবস্থানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে,ঠিক তখন সে ঘড়িতে সময় দেখছে , আর পরীক্ষক রুমের এক পাশ থেকে অপর পাশে চলন্ত অবস্থায় গার্ড দিতে দিতে ঘড়ি দেখছে। চলন্ত পরীক্ষকের ঘড়ি, স্থির পরীক্ষার্থীর ঘড়ির চেয়ে ধীরেধীরে টিক্ পরিমাপ করে। পরীক্ষক মনে মনে চিন্তা করে “সময় যেন কাটেনা বড় বোরিং বোরিং লাগে। আর পরীক্ষার্থী মনে মনে চিন্তা করে “এ সময় যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত তুমি বলতো” চলন্ত অবস্থায় শিক্ষকের ঘড়ি ধীরে চলছে বলে মনে হবে আর স্থির অবস্থানে বসে থাকা পরীক্ষার্থীর ঘড়ি দ্রুত চলছে বলে মনে হবে। এটাকেই কাল দীর্ঘায়ন (Time Dilation) বলে। সময়ও আপেক্ষিকতা তত্ত্ব মেনে চলে।
অতএব, সময় পরম বা ধ্রুব নয়, সময় হচ্ছে আপেক্ষিক।
আবার ধরা যাক, তুমি সারারাত ফেসবুক চালানোর পর সকালে পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রশ্ন হাতে পেয়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে আছো, তুমি যখন কিছুই পারছনা তোমার সামনের বন্ধুটি ১০০ ওয়ার্ড পার মিনিটে লিখে যাচ্ছে, তুমি তাকে দেখানোর জন্য আকুতি করলেও তার কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছেনা। পরীক্ষার শুরুতে তোমার মনের যতটুকু দৈর্ঘ্য জুড়ে তার জন্য বন্ধুত্বসুলভ অনুভূতি ছিল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তার গতিশীল বিরতিহীন লেখার জন্য সেই অনুভূতি সংকুচিত হতে শুরু করল। বন্ধুকে চির শত্রু মনে হতে শুরু করল। তার লেখার গতি বৃদ্ধি পেলে তোমার মনে বন্ধুত্বসুলভ অনুভূতি কমতে থাকে। এই প্রভাবকেই দৈর্ঘ্য সংকোচন (Length contraction) বলে।
স্থান আর কাল বা সময়ের আপেক্ষিকতার ব্যাপারটা সবাই মেনে নিলেও ভরের আপেক্ষিকতার কথায় হয়তবা অনেকেই ভ্রু কুচকে ফেলবেন। অনেকেই হয়ত প্রশ্ন করবেন, “এ আবার কেমন কথা? ভর ধ্রুবক না তো কী?? ভর কী পরিবর্তন হয় নাকি?” হ্যা, ভরও আসলে ধ্রুবক নয়, আপেক্ষিক এবং শক্তিতে রূপান্তরযোগ্য।
ভর এবং শক্তি প্রকৃতপক্ষে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। অর্থাৎ কোনো পদার্থের ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়, আবার শক্তিকেও ভরে রূপান্তর করা যায়।
নির্মল স্যারের বাম হাত যার ভর সাড়ে দুই কেজি colonthree emoticon সেটি কোন ছাত্রের কানের নিচে এসে থাপ্পড়ে পরিণত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সেই সাড়ে দুই কেজি হাতে চারশ বিশ কিলোজুল শক্তি সঞ্চিত হয়। থাপ্পড় যখন কানের নিচে স্থাপিত হয় তখন সেই কানের নিচ ভারি হয়ে যায়। এখানে চারশ বিশ কিলোজুল শক্তি ভরে পরিণত হয়ে নির্দিষ্ট ছাত্রের কান ভারি করে একটি তীক্ষ্ণ শব্দের সৃষ্টি করে, আমরা জানি শব্দ এক প্রকার শক্তি। অর্থাৎ ভর কে প্রথমে শক্তিতে এবং সেই শক্তিকে পুনরায় ভরে রুপান্তরিত করা সম্ভব ( E=mc2)
-কুদরতি ইসলাম