বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বসবাস করেন দারিদ্র সীমার নিচে। খুব কম লোকেরই সামর্থ্য রয়েছে নিজে একটি বাসা বানিয়ে সেখানে সুখে থাকতে। আর এ কারণেই বাড়ি ভাড়া সেশ ভরসা। আর এ সুযোগে অধিকাংশ ভবন মালিকরাই হয়ে উঠেছে প্রচণ্ড স্বেচ্ছাচারি। রাজধানী ঢাকা শহরে বিভিন্ন ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলে উঠে এসেছে ভবন মালিকদের এ ঘটনা। ভবন মালিকদের এরূপ আচরণ যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অত্যচারী রাজাদের গল্পগুলো। বাড়িওয়ালাদের সাথে এগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলেই তারা হুমকি দেন, বাড়ি ছেড়ে দেয়ার। অগত্যা ভাড়াটিয়ারাও মেনে নেন অত্যাচারী রাজাদের নবরূপ ভবন মালিকদের এসকল অত্যাচার।
অধিকাংশ বাড়ির মালিক মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যেই ভাড়া আদায় করে নেন। কোন কারণে এ টাকা পরিশোধে এক দু দিন দেরি হলেই শুনতে হয় ভবন মালিকদের অকথ্য ভাষা। কিছু কিছু ভাড়াটিয়া বললেন, অনেক সময়ে চিকিৎসার জন্যও দেরি হয় টাকা দিতে। কিন্তা তারা এ ধরণের অজুহাত শুনতে চান না।
অনেক বাড়িতেই নেই তেমন কোন সুযোগ সুবিধা। অধিকাংশ বাড়িতেই নেই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা। এমনকি কিছু কিছু ভবন রয়ছে পনের তলা পর্যন্ত। কিন্তু নেই লিফট এর সুব্যবস্থা। অনেক বাড়িতেই আছে লিফট, কিন্তু খরচ বাঁচানোর অজুহাতে সেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রাখা হয়।
পানি মৌলিক অধিকার হলেও অধিকাংশ বাড়িতে দেয়া হয় না, এ সুবিধা। দিনে মাত্র তিন চারবার পানির মেশিন চালু করা হয়, এ সময়ের মাঝেই কেবল পানি পাওয়া যায়। বাকি সময় তাদের পানি ধরে রাখতে হয়। কোন কারণে কেও ধরে রাখতে না পারলে শুরু হয় চরম ভোগান্তি।
অধিকাংশ বাড়িতে ভাড়াটিয়াদের দেয়া হয় না, সদর দরজার চাবি। রাত ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যেই লাগিয়ে দেয়া হয় সদর দরজা। ভুমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ড ঘটে যেতে পারে যে কোন সময়ে। এতে ব্যপক প্রানহানী ঘটতে পারে। অনেকেরই অনেক কারন থাকতে পারে দেরি করে বাসায় ফেরার। আর একজন মানুষ, তিনি কখন বাড়িতে ফিরবেন, এটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব নিঃসন্দেহে ভবন মালিকের নয়। কিন্তু তারা এ ব্যপারেও হস্তক্ষেপ করেন।
বিদ্যুৎ বিল ও পানির বিল নিয়ে তাদের অনেকেই করেন কারচুপি। অভিযোগ রয়েছে, তারা তাদের ইচ্ছামত বিল আদায় করে থাকেন। ভাড়াটিয়ারা বিলের কাগজ দেখতে চাইলে বাড়িওয়ালারা দেখাতে চান না। অনেক বাসায় একটি মিটার দিয়ে একাধিক ভারাটিয়ার বাসায় লাইন শেয়ার করা হয়। কিছু কিছু বাসায় সাবমিটার ব্যবহার করা হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্তি বিল দিতে হয়। এ ব্যপারে ডেসার পরিচালক ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে কথা বললে তারা জানিয়েছেন, ভবন মালিকদের এরুপ আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
ভাড়া বা বিলের বাইরে বিভিন্ন কারণে প্রায়শই তারা আদায় করে থাকেন বিভিন্ন টাকা।
তবে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ব্যাচেলরগোষ্ঠী। কোন এক অজানা কারণে ভবন মালিকদের যেন চিরশত্রু এ গোষ্ঠী। সহজে বাসা পায় না তারা। আর পেলেও বাসাগুলো বাসযোগ্য নয় এবং অনেক বেশি ভাড়া দাবী করে থাকেন। অগত্যা তারা সেখানেই থাকেন। অনেক ব্যচেলর মজা করে বলেন, বাসা ভাড়া দেয়ার সময়ে তারা আমাদের দিতে চায় না, আর মেয়ের বিয়ের সময়ে তারাই আবার ব্যচেলর ছেলেই খুজেন। তবে এ কৌতুকের পেছনে যে তাদের একরাশ দুঃখ আছে, তা কিন্তু তারা লুকাতে পারেন নি।
ইবন সিনা হাসাপাতালের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হাই জানালেন, ভবন মালিকদের এরুপ আচরণ সাধারন মানুষদের উপরে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। যাতে নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে।
বনানী কেন্দ্রিয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি ইমরান হাসান জানালেন, ভবন মালিকদের এরকম আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। এটা এক ধরণের নির্যাতন এবং মানুষের উপরে এরকম নির্যাতন কখনই ইসলাম সমর্থন করে না। হযরত মুহাম্মাদ সঃ আমাদেরকে শিখিয়েছেন মানুষের সাথে নম্রভাবে কথা বলতে। আমাদের কোন আচরণ অন্য কারও জন্য কষ্টকর হলে, আমাদের এ ব্যপারে জিজ্ঞ্যাশাবাদ করা হবে।
BNWLA এর আইনজিবী সালমা খাতুন জানালেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়, তাই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে এসকল অসাধু ভবন মালিকরা। তিনি জানিয়েছেন, যে কোন ব্যপারে আইনজীবী ও পুলিশের সহায়তা ভাড়াটিয়ারা চাইতে পারেন। অধিকার সচেতন অল্প দু একজন থানায় অভিযোগ করতে গেলে তারা অভিযোগ নেন না। এমনকি অনেক পুলিশ অফিসার নাকি বলেছে, এইটা বাংলাদেশ। আমেরিকা না।
সরকার এসকল ব্যাপারগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখবে ও সাধারণ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবে, এমনটাই আশা সাধারণ জনগনের।