অনেক নারী বিয়ের পর নিজের নাম পরিবর্তন করে স্বামীর পদবীকে নিজের নামের অংশ বানিয়ে ফেলে। যেমন ফাতেমা বেগম, আব্দুল্লাহ আল মামুন কে বিয়ে করে হয়ে গেলেন ফাতেমা আব্দুল্লাহ/ফাতেমা মামুন বা মিসেস মামুন। ইসলামী শরী‘আর দৃষ্টিতে এটা ঠিক নয়। মুসলিম নারীদের উচিত বিয়ের পরও তার পৈতৃক নাম ঠিক রাখা। কারণ এটা তার একেবারেই নিজস্ব, এখানে স্বামীর কোন অংশ বা কর্তৃত্ব নেই। বাবা কর্তৃক প্রদত্ত নাম ঠিক রাখার জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
‘তোমরা তাদেরকে তাদের বাবার নামে ডাকো।’
-সুরা আহযাব – আয়াত ৫
এই আয়াতটি পালকপুত্রদেরকে তাদের প্রকৃত পিতার নামে ডাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা এও নির্দেশ করে যে স্ত্রীদেরকেও তাদের পিতার নামে ডাকতে হবে।
ইবন আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, ‘যে কেউ নিজেকে বাবার নাম ছাড়া অন্য নামে ডাকবে তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতা ও সমগ্র মানুষের লা‘নত বর্ষিত হবে।’
-মুসনাদে আহমাদ
ইমাম বুখারীও (র) এই হাদীসটি হযরত সা‘দ (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হযরত সা‘দ ও হযরত আবু বাকরা (রা) হতে বর্ণিত, তাঁরা প্রত্যেকে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে নিজের পিতা ছাড়া অন্যের সাথে সংযুক্ত করে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে।’
-ইবনে মাজাহ
আবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কেউ নিজের বাবা ব্যতীত অন্যের পরিচয়ে পরিচয় দেয় সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না, যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ সত্তর বছর হাঁটার রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে।”
-মুসনাদে আহমাদ
আমরা বিদেশি সংস্কৃতি বিশেষ করে পশ্চিমাবিশ্বকে অনুসরণ করতে গিয়ে এমন অনেক বিষয় অনুকরণ করছি যেগুলোর বিষয়ে ইসলামী শরী‘আর কোন ভিত্তি নেই। উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মের অনুসারীগণ এমনটি করে থাকেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবীগণের (রা) জীবনাচারেও এর কোন নজির নেই। সুতরাং এগুলো বর্জনীয়। যদি স্বামীর নামে পরিচিত হওয়া বা স্বামীর নাম নিজের নামের সাথে যুক্ত করা আভিজাত্য বা মর্যাদার ব্যাপার হতো, তাহলে আমাদের প্রিয়নবী (স) এর স্ত্রীগণ বা উম্মাহাতুল মু’মিনীনগণও তাঁদের নামের সাথে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম যুক্ত করতেন। হযরত ‘আয়েশা সিদ্দীকা (রা) বিয়ের পর তাঁর নাম পরিবর্তন করে ‘আয়েশা মুহাম্মদ’ রাখেননি। বরং তিনি তাঁর পিতা আবুবকর সিদ্দীকের (রা) পরিচয় অক্ষুণ্ন রেখেছেন। রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও অনেক হাদিসে এমন এসেছে যেখানে তাকে “হে আবু বকর এর কন্যা” সম্বোধন করেছেন।
বাস্তবতা হলো, সেই সময়ে তাঁদের কেউই এমন করেননি। বরং প্রত্যেকে নিজেদের পিতার নামেই পরিচিত ছিলেন যদিও তাঁদের কারো কারো কারো পিতা কাফির ছিল। সুতরাং আমরা আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এমন কোন বিষয় অবলম্বন করতে পারি না যার অনুমোদন উত্তম যুগে ছিল না।
তাই পরিচয় হোক জন্মদাতা পিতার পরিচয়ে। রক্তের সাথে রক্তের টান।
-মুহাম্মাদ জোহা