অসাধারণ একটি ছবি দিয়ে একজন দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখা যায়। তাকে নিয়ে যাওয়া যায় কল্পনার একটি জগতে। যেখানে তিনি বিচরণ করেন ঐ স্থানে। এন্সেল এডামস, স্টিভ ম্যাককারি, জি এম বি আকাশ এদের হাত ধরে তরুণরাও সে পথে উঠে আসছে। তারা রাখছে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর। এরকমই একজন বাংলাদেশী তরুণ কাজী মুশফিক হোসেন। সেলফোন ক্যামেরা দিয়ে যার শুরু হয়েছিল রহস্যময় এ জগতে যাত্রা। এরপর হাতে পান ক্যানন ই ওস ৫৫০ ডি ক্যামেরা। মূলত ট্রাভেল ও স্ট্রিট ফটোগ্রাফি করেন তিনি। সময় পেলেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন সাথে তার প্রিয় ক্যামেরা।
স্মৃতির পাতায় বিচরণ করে তিনি বলেন, “ছবি তোলার একদম আগের কথা। একবার এয়ারটেল একটা লাইক কন্টেস্ট আয়োজন করেছিল। ছবি ভাল থাকা সত্ত্বেও আমার ছবি এক্সিবিশনের জন্য নির্বাচিত হয়নি। এক্সিবিশনে যেয়ে মন খারাপ হয়েছিল। তখন একটা জেদ কাজ করেছিল। এমন একদিন আসবে আমার ছবি সবাই দেখবে। তখন ছোট ছিলাম । জেদটা কিন্তু বিফল এ যায়নাই। হাহা”
তার প্রথম পুরষ্কার ছিল পিউপ্ল’স চয়েস এওয়ার্ড ই ৩৬০ ফটোগ্রাফী কন্টেস্ট এ। স্মৃতির পাতায় আজীবন ধরে রাখার মত একটি মুহুর্ত সেটি।
তার অধিকাংশ ছবিতে ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স এর ব্যবহার দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে কম্পোজিশন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। তবে কাজটা বেশ কঠিন। তার আলোচিত অধিকাংশ ছবি গুলোতে তিনি ব্যবহার করেছেন ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স এবং এ ছবিগুলোর জন্য তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও পুরষ্কার।
তার অর্জিত উল্লেখযোগ্য পুরষ্কারসমূহ হচ্ছে, হিউম্যানিটি ফটো ২০১৫ এর পারফরম্যান্স পুরষ্কার, সনি ওয়ার্ল্ড পুরস্কার এর বাংলাদেশ থেকে তৃতীয়, সেনোভেসন এর প্রথম পুরষ্কার। এছারাও তিনি আরও প্রায় দশটি পুরষ্কার পেয়েছেন।
প্রতিশ্রুতিশীল এ তরুণ ফটোগ্রাফার এর সাথে ফটোগ্রাফারদের প্রাণের স্থান দৃক গ্যালেরিতে এক আড্ডায় ছিলেন প্রেস বাংলাদেশ প্রতিবেদক যুবাইর বিন ইকবাল। পাঠকদের কাছে তার নির্বাচিত অংশঃ
প্রশ্নঃ আপনি একজন অসাধারণ ফটোগ্রাফার। নিজেকে একজন সফল ফটোগ্রাফার হিসাবে কিভাবে গড়ে তুলেছেন?
কাজী মুশফিক: প্রথমেই বলে নেই আমি একজন সাধারণ মানুষ যে ছবি তুলতে অনেক ভালবাসে। এখনও নিজেকে ওই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি। ২০১২ থেকে ছবি তোলা শুরু করি। এরপর যতটুকু অর্জন হয়েছে তা মহান আল্লাহর রহমত ও প্রিয় মানুষদের দোয়ায়।
প্রশ্নঃ আপনার বর্তমান কর্ম ব্যস্ততা কি?
কাজী মুশফিক: এইতো মাত্রই পাশ করলাম। বর্তমানে আমি একটি মাল্টিন্যাশনাল এড এজেন্সি “মেটাকানেক্ট” এ জুনিয়র সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার ও ভিজুয়াল ইন চার্জ পোস্ট এ দায়িত্বরত আছি। এছাড়া নিজের ফটোগ্রাফী ফার্ম “ফটোগ্রাফী বাই কাজী মুশফিক“ নিয়েও কাজ করছি।
প্রশ্নঃ ভবিষ্যৎপরিকল্পনাকি?
কাজী মুশফিক: বেশী দূরের চিন্তা করিনাই। তবে হ্যা পুরো পৃথিবী একবার হলেও ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে।
প্রশ্নঃ নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
কাজী মুশফিক: অবশ্যই এমন একটা জায়গায় যেখানে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকা যায় সকলের কাছে।
প্রশ্নঃ কাকে আদর্শ মনে করেন এবং কেন?
কাজী মুশফিক: পাপা-আম্মু । কারণ বলে শেষ করা যাবে না।
প্রশ্নঃ পছন্দের বিষয় কি এবং কেন?
কাজী মুশফিক: ফটোগ্রাফী, ক্রিকেট, ট্রাভেল আর হ্যা অবশ্যই খাওয়া দাওয়া। কারণ তো জানিনা। ভাল লাগে তাই । হেহে
প্রশ্নঃ কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছেন? ফটোগ্রাফির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা কতটুকু দরকার?
কাজী মুশফিক: আলিয়াস ফ্রসেস এ ২০১১ তে একটা শর্ট কোর্স করসিলাম। প্রথম বারের মত হোয়াইট কার্ড রিডিং, এক্সপোজার নেওয়ার অনুভুতি অন্যরকম ছিল। আমি আসলে ফটোগ্রাফির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা জরুরি কিনা বলতে পারি না। হয়তবা জরুরি আবার নাও হতে পারে। ইদানিং অনলাইন এই অনেক কিছু শিখা যায়। ইচ্ছা থাকলে প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা না নিয়েও ভাল কিছু করা সম্ভব।
প্রশ্নঃ কোথায় কোথায় কাজ করেছেন?
কাজী মুশফিক: সবসময় ইচ্ছা ছিল নিজের কিছু করার। তাই ফটোগ্রাফার হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে আগে ওরকম কাজ করিনাই। তবে হ্যা ফ্রীল্যান্স করেছি অনেক।
প্রশ্নঃ পেশাগত জীবনে নেতিবাচক কিছু পেলে কিভাবে সামলে নেন নিজেকে?
কাজী মুশফিক: জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বলি মনে মনে বলি আল্লাহ ভরসা, যা হয় ভালর জন্যি হয়। নেতিবাচক নিয়ে পড়ে না থেকে সামনের দিকে ভাবী সবসময়। সুফল আসে।
প্রশ্নঃ নিজের দেশের বাইরেও আপনার অনেক ভক্ত রয়েছেন, যারা আপনার ছবি মুগ্ধ নয়নে দেখে। কেমন অনুভব হয় তখন?
কাজী মুশফিক: হাহা। তাইনাকি? হ্যা ফ্লিকার বা অন্য কোন সোসাল প্লাটফর্ম এ ভাল ফিডব্যাক পেলে খুশি হই।
প্রশ্নঃ প্রথম পুরষ্কার পাবার পরের গল্পটা কি ছিল? কেমন অনুভুতি ছিল সেসময়ে?
কাজী মুশফিক: অসাধরণ। মনে রাখার মত দিন ছিল।
প্রশ্নঃ সমাজে এখন অবক্ষয়, অপরাধ অনেক বেশি। এগুলো কমাতে কি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন।
কাজী মুশফিক: আমার মনে হয় আমাদের নিজেদের বদলানো দরকার। চেঞ্জ ইউরসেলফ ওয়ারল্ড উইল ফলো ইউ
প্রশ্নঃ খেলাধুলা করেন? পছন্দের খেলয়ার কে?
কাজী মুশফিক: এখন আর সময় পাইনা। আগে ক্রিকেট খেলতাম। পছন্দের খেলোয়াড় অনেকেই। মোহাম্মাদ আশরাফুল, শচীন তেন্ডুল্কার, এবিডিবিলিয়ার্স।
প্রশ্নঃ অবসরে কি করেন সাধারণত?
কাজী মুশফিক: কাছের মানুষদের সাথে সময় কাটাই।
প্রশ্নঃ কোথায় ঘুরতে পছন্দ করেন এবং সাথে কাকে নিতে পছন্দ করেন?
কাজী মুশফিক: যেকোন দর্শনীয় যায়গাতেই ঘুরতে ভাল লাগে। সাধারণত বাবা-মা বা কাছের বন্ধুদের সাথেই ঘুরতে যাওয়া হয়।
প্রশ্নঃ অপছন্দের বিষয় কি?
কাজী মুশফিক: মিথ্যা কথা বলা।
পশ্নঃ জীবনের সবচেয়ে আনন্দ ও কষ্টের মুহুর্ত কি কি ছিল?
কাজী মুশফিক: এখনও জানিনা
প্রশ্নঃ পছন্দের রঙ
কাজী মুশফিক: নীল
প্রশ্নঃ পছন্দের খাবার ও পানীয়
কাজী মুশফিক: লিস্ট টা অনেক বড় । হাহা
প্রশ্নঃ পছন্দের পোশাক
কাজী মুশফিক: পাঞ্জাবী
প্রশ্নঃ নতুনদের জন্য কোন পরামর্শ
কাজী মুশফিক: নেট এ অনেক অনেক ছবি দেখ এবং অনেক অনেক ছবি তুলো। গিয়ার এর পিছে না দৌড়ায়ে ছবির পিছে দৌড়াতে হবে। চেষ্টা থাকলে সাফল্য আসবেই। আর হ্যা সবসময় মাথায় রাখবা ঈউ আর ঈউর কান্ট্রি । সো এক্ট লাইক দ্যাট। অনেক ফাউ উপদেশ দিয়ে ফেললাম। নিজেকে এবার একটু জ্ঞানী লাগতিসে। হেহে