লোপামুদ্রা তালুকদারের বিশ্বজয়

Lopamudra Talukdar
লোপামুদ্রা তালুকদার

বাঙালী রমণী তাকে মানায় রান্না ঘরে উনুনের পাশে অথবা উঠোনের কোণায় ধান মাড়াচ্ছে। স্বামীর ঘর করবে এইতো। কিন্তু এভাবে আর কতকাল নিজেদের ঘরে বন্দি করে রাখবে তারা নিজেদের? এক সময়ে তারা জেগে উঠলো। তারাও শুরু করলো নিজেদের যাত্রা। ঘর থেকে বের হলো। চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি। অনেকেই নিজেদের আর একটু এগিয়ে নিয়ে নিজেদের চিনিয়েছেন ভিন্নভাবে। কেও হাতে নিয়েছেন রঙ তুলি আবার কেও বা হারমোনিয়াম। কিন্তু তাই বলে ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে বনে বাদারে ঘুরে বেড়াবে একজন রমণী? এ সমাজ সেই নারীকে কিভাবে মেনে নেবে? জাত গেল, সমাজ গেল, এরকম আরও কত কি? কিন্তু তাই বলে তারা বসে থাকবেন? কেন তারা বঞ্চিত হবেন, ক্যামেরা দিয়ে বিশ্বকে দেখার? সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাঈদা খানম সহ আরও অনেক নারীই বেরিয়ে পড়লেন ক্যামেরা হাতে নিয়ে বিশ্ব জয় করতে। সাঈদা খানমদের দেখানো সে পথে হেটেছেন আজকের নারীরা। এরকম একজন বাঙালী রমণী লোপামুদ্রা তালুকদার। জনপ্রিয় এ আলোকচিত্রি এবার মুখোমুখি হলেন প্রেস বাংলাদেশের। সাথে ছিলেন প্রেস বাংলাদেশ প্রতিবেদক যুবাইর বিন ইকবাল। নির্বাচিত অংশ পাঠকদের জন্য।

Dream
স্বপ্ন

প্রশ্নঃ আপনি একজন অসাধারণ ফটোর। নিজেকে একজন সফল ফটোগ্রাফার হিসাবে কিভাবে গড়ে তুলেছেন?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ আমি নিজেকে একজন অসাধারণ নই সাধারণ ফটোগ্রাফার হিসাবেই গণ্য করি। ২০১০ সালে আমার ছবি তোলায় হাতে খড়ি। ওই বছর ইউরোপের অনেকগুলো দেশে যাওয়ার সুযোগ হওয়ায় প্রথম স্ট্রিট ফটোগ্রাফির স্বাদ পাই। বিভিন্ন ডিজিটাল ফোরামে ছবি শেয়ার করার মাধ্যমে পজিটিভ ফিডব্যাক পেতে শুরু করি। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠিয়ে আশাতীত সাফল্য পাই, উৎসাহিত হই। এরপর ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেকে নিজেই শিক্ষিত করি। আমার মনে হয় ভালো ছবি তুলতে হলে ভালো ছবি দেখা, বোঝা, পর্যালোচনা করা ভীষন জরুরি।

প্রশ্নঃ আপনার বর্তমান কর্মব্যস্ততা কি?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ এই মুহূর্তে বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টারি ছবি তুলছি তবে ফোটো স্টোরি করাতেই আমার বেশি আগ্রহ।

প্রশ্নঃ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

প্রশ্নঃ কাকে আদর্শ মনে করেন এবং কেন?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ অনেকের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি তবে আলাদা করে কাউকে আদর্শ মনে করি না। আমার মনে হয় আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে কিছু শেখার আছে।

প্রশ্নঃ পছন্দের বিষয় কি এবং কেন?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ ফটোগ্রাফির বাইরে সবচেয়ে পছন্দের বিষয় ভ্রমণ। কয়েক মাস বাইরে না গেলেই মন খারাপ হয়ে যায়। নতুন দেশ দেখতে, সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মানুষজনের সঙ্গে পরিচিত হতে ভালো লাগে।

Potatso National Park, China
পটাতশ ন্যাশনাল পার্ক, চীন

প্রশ্নঃ কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছেন? ফটোগ্রাফির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা কতটুকু দরকার?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ আমার সেই অর্থে ফটোগ্রাফিতে কোনো প্রথাগত শিক্ষা নেই। যতটুকু শিখেছি তার অনেকটাই ইন্টারনেট থেকে। এটা ডিজিটাল যুগের এক বিশাল সুবিধা বলে আমার মনে হয়। সিনিয়রদের কাছ থেকেও বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ পেয়েছি।

প্রশ্নঃ কোথায় কোথায় কাজ করেছেন?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ বাংলা এবং ইংরেজি একাধিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের হয়ে ফোটো ফিচার করেছি।

প্রশ্নঃ কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়েছেন?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ কাজ করতে গেলে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতেই হয়, আমিও তার ব্যতিক্রম নই। উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তা সামলেও নিয়েছি।

প্রশ্নঃ পেশাগত জীবনে নেতিবাচক কিছু পেলে কিভাবে সামলে নেন নিজেকে?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ নেতিবাচক কিছুর সম্মুখীন হলে সবসময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করি।

প্রশ্নঃ নিজের দেশের বাইরেও আপনার অনেক ভক্ত রয়েছেন, যারা আপনার ছবি মুগ্ধ নয়নে দেখে। কেমন অনভব হয় তখন?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ একজন আলোকচিত্র শিল্পী হিসাবে প্রশংসিত হতে, তা দেশে হোক বা বিদেশে, ভালোই লাগে। সবসময় চেষ্টা থাকে নিজের দেশ সম্পর্কে একটা ইতিবাচক চিত্র যাতে তুলে ধরতে পারি।

প্রশ্নঃ প্রথম পুরষ্কার পাবার পরের গল্পটা কি ছিল? কেমন অনুভুতি ছিল সে সময়ে?
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ ছবি তুলতে শুরু করার এক বছরের মধ্যেই একটি প্রেসটিজিয়াস আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পুরস্কার পাই। এটা সেই সময় আমার কাছে আশাতীত ছিল। তবে উৎসাহিতও হয়েছিলাম ফোটোগ্রাফিকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার জন্য।

প্রশ্নঃ নতুন ফটগ্রাফারদের জন্য কিছু পরামর্শ।
লোপামুদ্রা তালুকদারঃ ভালো ছবি দেখ, ছবি নিয়ে আলোচনা করো। নিজের উপর অনাবশ্যক চাপ দিও না। অল্পে হাল ছেড়ে দিও না। প্রতেকদিন কারো ভালো ছবি হয় না। নিজের ছবির নিজেই কডা বিচারক হও।

River
নদী

ওয়েব সাইটঃ www.lopamudratalukdar.com

top wedding photographerin bangladesh

Leave a Comment