মাস্টিটিস
মাস্টিটিস একটা ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন যা বাচ্চা কে দুধ খাওয়ানো শুরু করার প্রথম সপ্তাহে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু লক্ষন দেখেই সেটা সহজে বোঝা যায় যে এটা মাস্টিটিস কিনা। সব চেয়ে সহজ লক্ষন টি হল বাচ্চা কে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর প্রথম সপ্তাহে জ্বর এবং স্তনে ব্যাথা অনুভত হলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নেয়া যায় মাটিস্টিসের লক্ষন।
করনীয়ঃ
মাস্টিটিস বা ব্রেস্টফিডিং এর প্রথম সপ্তাহে জ্বর জ্বর অনুভুত হলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
স্তন ব্যাথা
কোন মা যখন বাচ্চা কে ব্রেস্ট ফিডিং করাবেন, বিশেষ করে প্রথম বার হয় তখন ব্যাথা হওয়া টা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বাচ্চা দুধ খাওয়া শুরু করার পর ব্যাথা শুরু হয় আর সেই ব্যাথা ১ মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে তখন বুঝতে হবে আপনার বাচ্চার মুখের পজিশন ঠিক নেই কারন সঠিক পজিশনে না থেকে যদি বাচ্চা দুধ থেকে থাকে তাহলে সাধারনত ব্রেস্টে পেইন বা ব্যাথা অনুভুত হয়।
সমাধানঃ
বাচ্চা কে এমন ভাবে ব্রেস্ট ফিডিং করাবেন যাতে তার মুখের পুরো অংশ টা স্তনের নিপলকে কাভার করে দেয়। মনে রাখবেন ব্রেস্ট যদি ঠিক মত বাচ্চার মুখে না থাকে তাহলে একদিকে যেমন আপনার পেইন হতে পারে অন্য দিকে বাচ্চা ঠিক মত দুধ নাও পেতে পারে। তাই বাচ্চার পজিশন টা খুব গুরুত্বপূর্ণ এখানে। আর যদি এমন হয় যে বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে তবুও ব্যাথা হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ব্রেস্ট যথেষ্ট শক্ত বা শুষ্ক। সেই ক্ষেত্রে একটু ঢিলেঢোলা সুতি আরামদায়ক পোশাক পড়া ভালো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
দুধ জমাট বাঁধা
ঠিকমতো দুধ বের হতে না পারলে দুধ জমাট বেঁধে যায়। হালকা জ্বর আসা বুক ভারি হয়ে যাওয়া এর প্রধান লক্ষন। এতে মায়ের স্তনে ব্যথাও হয়। বাচ্চাকে দুধ দিতে গিয়েও পড়তে হয় ঝামেলায়।
সমাধানঃ
দুধ যেন ঠিকমতো বের হতে পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম মেনে বাচ্চাকে দুধ দিতে হবে। স্তনে হালকা গরম কাপড়ের সেক নিলে আরাম পাওয়া যাবে। হালকা ম্যাসাজ করলেও দুধের জমাট বাঁধা দূর হয়ে যায় অনেক সময়। কোনোভাবেই টাইট ব্রা পড়া যাবে না এ সময়। তারপরও যদি জ্বর বাড়ে এবং স্তন জমাট বেঁধে ভারি হয়েই থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করাই উচিত।
শুষ্ক নিপল
ব্রেস্টফিডিং এর সময় আরেকটি সমস্যা হল শুষ্ক নিপল। এর অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে। এর মাঝে অন্যতম হল বাচ্চার ঠিক মত দুধ না খাওয়া। ব্রেস্টফিডিং এর প্রথম সপ্তাহে যখন প্রথম আপনি ব্রেস্টফিডিং করাবেন প্রথমে কিছু রক্ত বের হতে পারে তবে এতে চিন্তিত হবার কিছু নেই।
সমাধানঃ
এই ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা টা যেহেতু বাচ্চার ঠিক মত পজিশন না হওয়া তাই এই ক্ষেত্রে বাচ্চা কে ব্রেস্টফিড করানোরও সময় খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা ঠিক মত নিপল এ মুখ দিয়েছে কিনা এবং বাচ্চা ঠিক মত ব্রেস্ট তার মুখে নিয়েছে কিনা। এছাড়া প্রথম দিকে বাচ্চা কে অল্প অল্প বিরতি দিয়ে একটু পর পর দুধ খাওয়াতে হবে যাতে বাচ্চার খুব বেশি ক্ষুধা না আর সে ধীরে ধীরে দুধ পান করে।
ব্রেস্টফিডিং এর সময় বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়া
বাচ্চা দুধ খেতে খেতে অনেক সময় ঘুমিয়ে পরে বা মুখে ব্রেস্ট ফিক্স করে কিছু সময় খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। আসলে বাচ্চা জন্মের পর প্রথম কিছু মাস একটু বেশিই ঘুমিয়ে থাকে তাই এটা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই।
সমাধানঃ
এই ক্ষেত্রে যেটা করা যায় সেটা হল বাচ্চা কে একটি ব্রেস্ট কিছুক্ষণ খাওয়ানোর পর আবার অন্য ব্রেস্ট খাওয়ানো তাহলে বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগ কম থাকে আর একই সাথে দুধের ভারসাম্য বজায় থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ না থাকা
পুষ্টির অভাব, স্তন সার্জারি ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মা’র শরীরে অনেক সময়ে দুধ কম থাকে। আবার কিছু সময় মায়ের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য এর অভাবেও মায়ের বুকের দুধের ঘাটতি হতে পারে। এতে শিশু পর্যাপ্ত দুধ পায় না। এতে শিশুর পুস্টিহীনতা দেখা যায়।
সমাধানঃ
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া।
সাধারণ উপদেশ
- ব্রেস্ট ফিডিং এর সময়ে মা’কে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- দুশ্চিন্তা দুধের নিঃসরণক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই মাকে হাসিখুশি থাকতে হবে।
- সর্বদা স্তন পরিষ্কার রাখতে হবে।
- টাইট ব্রা পরিধান করা যাবে না।