রোবট সোফিয়ায় আমার আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসে, এয়ারপোর্ট পেরুতেই এক বিপদে পড়ে গেলো, তার লাগেজ পাওয়া যাচ্ছে না, এত কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন সোফিয়া পুরো পৃথিবীর তাবৎ এয়ারপোর্ট স্ক্যান করেও কোথাও না পেয়ে হতাশ মনে বেড়িয়ে সিএনজি নিলো, এখানেও সোফিয়ার বিপদ, সিএনজি মিটারে যাবে না, দরদাম করার লজিক তার ভিতরে নেই, তাই সে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল, শহরে লক্ষ টাকার রপ্তানি করা গাছ গুলো দেখি সোফিয়ায় আমাদের সম্পর্কে ভাল একটা ধারণা নিলো, গুলশান এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে তাঁর উন্নত ধারনার স্কেল আরও বেড়ে গেলো, সে আমাকে ক্ষুদে বার্তায় জানালো সে খুব শিঘ্রই পৌঁছে যাচ্ছে আমার কাছে, সোফিয়ায় এবার প্রটোকলের ধাক্কায় আটকে গেলো, হাজার হাজার মানুষ আটকে মাত্র একজন ব্যাক্তিকে নেওয়া হলো, সোফিয়া সবার কাজের গুরুত্ব সময় ব্যায় হিসেব করে দেখলো আমাদের দেশ আরও তিন দিনের পিছনে চলে গেছে উন্নতির হার, সোফিয়া আমাদের এলাকায় ঢুকতে আরও ধাক্কা খেলো, এখানে রাস্তা জলমগ্ন, দুষিত পানি মাড়াতে হচ্ছে, গর্তে ভরা, সোফিয়া আমাদের ভ্যাট লিষ্ট ও গুলশানের ভ্যাট লিষ্ট স্ক্যান করলো, একই তো, তাহলে এখানকার লোকদের কি অপরাধ?
সোফিয়া এখন বিরস মুখে আমার সামনে বসে, জিজ্ঞাসা করলো আমি কি করছি? আমি বললাম কয়েল ধরাচ্ছি, সে বললো কয়েল কেন? আমি বললাম এখানে দিনের বেলায়ও মশায় কামড়ায়, এদেশের মশাদের বিশ্বাস নেই, রোবট হলেও তোমাকে কামড়াতে পারে, সে তখন আমাদের মশার থেকে বাঁচার ওষুধ শেষ কবে স্প্রে হয়েছে তা স্ক্যান করে অবাক হলো, এ তথ্যটি পাওয়া যায়নি, আমাকে প্রশ্ন করলো এই কয়েলের মূল্য কত? মূল্য বলার পর সে বার কয়েক লাল লাইট জ্বেলে বললো এত বেশি কেন? আমি বললাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলতে পারবে, সোফিয়া কে বললাম দেখ দেখি তোমাকে চা খাওয়াবো অথচ ঘরে গ্যাস নেই, সোফিয়া মৃদু হেসে বললো রোবটরা ক্ষুধামুক্ত ধন্যবাদ, কিন্তু গ্যাস নেই কেন? তুমি কি নিয়মিত বিল পে করো না, আমি বললাম করি কিন্তু এদেশে কোন অদৃশ্য কারণে আমাদের প্রায়ই গ্যাস সমস্যায় পড়ি, নাসার বিজ্ঞানীরাও এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, সোফিয়া বললো সার্ভিস না পেয়ে যে বিল দিচ্ছ? আমি বললাম এর উত্তর স্ক্যান করে নাও।
কিছু ওষুধ নিলাম খাওয়ার জন্য, সোফিয়া স্ক্যান করে বললো এগুলোর বেশিরভাগই ওষুধ নয় চক পাউডার অথবা ময়দার গুল্লি, এবার একটা গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট হাতে নিয়ে দাম জানতে চাইলো, আমি দাম বললাম, আরও বললাম এগুলো এখন নিয়মিত খাবারে পরিণত হয়েছে, সোফিয়া এর উৎপাদন ব্যায় হিসেব করে কতক্ষণ পি পি শব্দ করে সোফায় লুটিয়ে পড়লো।
সোফিয়া আমাদের ভাষায় জ্ঞান হারিয়েছে, তার তথ্য ভান্ডার, লজিক এন্টি লজিক সব গোলপাকিয়ে নিজেই নিজের সার্কিট ব্রেক করেছে, বেচারা হয়তো ভেবেছে এদেশে মানুষ বেঁচে আছে এটা লজিকের বাহিরে আশ্চর্যজনক সত্য, আমরা কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে পারি, রোবট হয়তো পারে না।
এই কে আছিস, এই সোফিয়াকে ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করে দুকেজি পেয়াজ কিনে নিয়ে আয়